ওমরাহ্‌ পালনের নিয়ম

ওমরাহ্‌ পালনের নিয়ম

আমরা যারা উমরাহ্‌ করার নিয়ত করেছি তাদের প্রত্যেকেরই উমরাহ্‌ করার যাবতীয় নিয়ম কানুন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা জরুরী। আমাদের সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে কিভাবে উমরাহ্‌ করতে হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

উমরাহ্‌ পালনের নিয়মাবলীকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় –

এক: ইহরাম (ফরজ)

দুই: তাওয়াফ (ফরজ)

তিন: তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব)

চার: সায়ী (ওয়াজিব)

পাচ: মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা (ওয়াজিব)

এক: ইহরাম

ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে করণীয়ঃ

ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে শরীরের গুপ্ত লোমগুলো পরিস্কার করা, নখ কাটা, গোসল করা এবং পুরুষদের (মহিলাদের জন্য নয়) শরীরে আতর লাগানো সুন্নত, তবে ইহরামের কাপড় পরিধানের পর শরীরে বা ইহরামের কাপড়ে আতর লাগানো যাবে না।

পুরুষদের জন্য ইহরামের কাপড়ঃ

পুরুষরা ইহরামের কাপড় হিসেবে সেলাই বিহীন দুই টুকরা কাপড় পরবেন, একটি শরীরের নীচের অংশে লুঙ্গির মত করে (ছোট টুকরাটি) এবং অন্যটি গায়ে চাদরের মত করে (বড় টুকরাটি)। মাথায় টুপি পড়া যাবে না বা কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকা যাবে না, পুরুষরা পায়ের পিছনের গোড়ালির অংশ ঢাকা থাকে এরকম কোন স্যান্ডেল পরতে পারবেন না।

মহিলাদের জন্য ইহরামের কাপড়ঃ

মহিলারা ইহরামের জন্য সেলাই যুক্ত যে কোন পোশাক পরিধান করতে পারবেন। কিন্তু মহিলারা ইহরামের হালতে নেকাব এবং হাতমোজা পরতে পারবেন না, তবে পরপুরুষরা যাতে চেহারা দেখতে না পায় সেজন্য বড় ওড়না বা এই জাতীয় কোন কাপড় দিয়ে নিজের চেহারা ঢেকে রাখবেন।

ইহরামের কাপড় কোথায় পড়বেনঃ

যেহেতু মহিলাদের জন্য আলাদা কোন ইহরামের পোশাক নেই তাই তাঁরা পছন্দসই পোশাকটি বাড়ি থেকেই পড়ে বের হবেন আর পুরুষরা মিকাতের পূর্বে যে কোন জায়গায় ইহরামের কাপড় পরতে পারবেন।

মক্কার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে সরাসরি জেদ্দা ভ্রমণ করলে (সৌদি এয়ারলাইন্স এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) বাড়ি থেকে বা এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন শেষ করার পর ফ্লাইটে উঠার আগে নামাজের রুমে গিয়ে ইহরামের কাপড় পরতে পারেন। আর যদি ট্রানজিট ফ্লাইটে ভ্রমণ করেন (এমিরেট্‌স এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্স, সালাম এয়ারলাইন্স, ওমান এয়ারলাইন্স ইত্যাদি) তবে ট্রানজিট এয়ারপোর্টের প্রেয়ার রুম বা নামজের স্থান থেকে ইহরামের কাপড় পরতে পারেন।

সৌদি এয়ারলাইন্সের কিছু ফ্লাইট ছাড়া অন্য ফ্লাইটে সাধারণত নামাজের জন্য ফ্লাইটের ভিতর আলাদা কোন জায়গা থাকেনা তাই ফ্লাইটের ভিতর ইহরামের কাপড় পড়া কষ্টসাধ্য বলা যায়।

যারা প্রথমে মদিনা যাবেন এবং পরে গাড়িতে বা ট্রেনে বা ফ্লাইটে মক্কায় এসে উমরাহ্‌ করবেন তাঁরা মদিনার হোটেল বা বাসা থেকেই ইহরামের কাপড় পরিধান করে নিতে পারবেন, তবে গাড়িতে করে মক্কায় ভ্রমণ করলে পথিমধ্যে মিকাতে গোসল করে ইহরামের কাপড় পরা উত্তম, মিকাতে গোসল করা মুস্তাহাব। মিকাতে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক গোসলের খুব সুন্দর ব্যবস্থা আছে।

মিকাতঃ

মিকাত বলতে কোন স্থানের সীমানাকে বুঝানো হয় অর্থাৎ যে স্থান থেকে উমরাহ্‌ করার নিয়ত করতে হয় বা ইহরাম বাঁধতে হয় সেটিই মিকাত। মনে রাখবেন, ইহরাম বাঁধা মানে ইহরামের কাপড় পরা নয়, মিকাত থেকে উমরাহ্‌র নিয়ত করার পর থেকেই ইহরাম বাঁধা হয়।

যে কোন দেশ থেকে বা মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে জেদ্দা গেলে যখন ফ্লাইট থেকে ঘোষণা দেয়া হবে যে – “কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা মিকাত অতিক্রম করবো” ঠিক সেই সময়টি অনুমান করে আকাশে ফ্লাইটে অবস্থানকালে উমরাহ্‌র নিয়ত করতে হবে। ফ্লাইট অবতরণ করার আনুমানিক ৫০ মিনিট পূর্বে এই ঘোষণা দেয়া হয় এবং অবতরণ করার আনুমানিক ৩০ মিনিট পূর্বে ফ্লাইটটি মিকাত অতিক্রম করে।

আর কেউ যদি প্রথমে মদিনা যেতে চান এবং মদিনা থেকে গাড়িতে বা ট্রেনে মক্কায় গিয়ে উমরাহ্‌ করতে চান – গাড়িতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আনুমানিক ২০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করার পর যুলহুলাইফা বা বীরে আলী মিকাত পাওয়া যাবে  এবং সেখান থেকেই উমরাহ্‌র নিয়ত করতে হবে। কিন্তু ট্রেনে মক্কায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনটি বীরে আলী মিকাত হয়ে মক্কা যায়না এবং মিকাত নির্দেশক কোন ঘোষণা বা নির্দেশনা সাধারনত দেয়না তাই মদিনা থেকে ট্রেন ছাড়ার ৫/১০ মিনিট পরেই উমরাহ্‌র নিয়ত করে নিবেন।

পুরুষদের উমরাহ্‌র নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয় (নিজেরটা নিজে শোনা যায় এমন আওয়াজে) । কিন্তু মহিলারা মনে মনে নিয়ত করবেন। নিয়তটি হল –

لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ عُمْرَةً

উচ্চারণ: লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা উমরহ্‌।

অর্থ: আল্লাহ্‌ আমি উমরাহ্‌’র নিয়ত করছি।

উল্লেখ্য যে, কেও যদি উমরাহ্‌’র নিয়ত না করে মিকাত অতিক্রম করে ফেলে তবে তাঁকে অবশ্যই আবার নিকটস্থ মিকাতে এসে নিয়ত করে উমরাহ্‌ করতে যেতে হবে। আর যদি তা না করে তবে একটি দম দিতে হবে। আবার ইহরাম বাঁধার বা উমরাহ্‌র নিয়ত করার পর কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে যেগুলোর কোনটা করলেও দম দিতে হবে। দম দেয়া হল – একটি ছাগল বা দুম্বা বা কুরবানি যোগ্য কোন পশু কুরবানি দেয়া এবং সম্পূর্ণ গোস্তটি মক্কায় মসজিদুল হারামে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া। উমরাহ্‌কারী নিজে এই কুরবানির গোস্ত খেতে পারবেন না।

ইহরামকালে নিষিদ্ধ কাজসমুহঃ

ইহরাম বাঁধার পর থেকে উমরাহ্‌ শেষ করা পর্যন্ত কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইহরামকালে নিষিদ্ধ কাজগুলো হল –

  • শরীরের যে কোন অংশের চুল কিংবা পশম কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা
  • নখকাটা
  • ঘ্রাণযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো
  • স্বামী-স্ত্রীর সংগম করা অথবা যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা
  • শিকার করা
  • কোন জীবজন্তু হত্যা করা
  • বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বা এই জাতীয় কোন ঘটকালি করা।
  • পুরুষদের মাথায় টুপি পড়া বা কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকা
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে পায়ের পিছনের গোড়ালির অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা
  • হারাম এলাকার মধ্যে কোনো গাছ কাটা, পাতা ছেঁড়া বা উপড়ে ফেলা
  • ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে সেলাই যুক্ত কোন পোশাক পরিধান করা

তালবিয়াঃ

উমরাহ্‌র নিয়ত করার পরেই বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করবেন। তালবিয়া দলগত ভাবে পাঠ না করে একক ভাবে পাঠ করতে হয়। পুরুষরা একটু উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করবেন যেন একে অপরে শোনা যায়, কিন্তু মহিলারা মনে মনে পাঠ করবেন। 

لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ: লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈকা লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি-আ মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক।

অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ ! আমি হাজির, আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই, নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার, আপনার কোন অংশীদার নেই।

দুই: তাওয়াফ

যেভাবে তাওয়াফ করা শুরু করবেনঃ

পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার আগে সম্ভব হলে আপনার হোটেল কিংবা বাসা থেকে গোসল করে নিবেন, এটি একটি মুস্তাহাব কাজ। ডান পা দিয়ে মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবেন এবং মসজিদে ঢোকার দু’আ পড়বেন –

بِسْمِ اللهِ وَ الصّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ أعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْم وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ اَللهُمَّ افْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحَمَتِكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল কাদিমি মিনাশশায়ত্বানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।

অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন।

এরপর মাতাফে পৌঁছালে (কাবাঘরের চারদিকের খোলা তাওয়াফের স্থান) তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করবেন। এবার কাবা ঘরের যে কর্নারে হাজরে আসওয়াদ আছে সে কর্নারে গিয়ে পুরুষরা ডান কাঁধ খোলা রেখে শরীরের উপরের অংশের ইহরামের কাপড়টি পরবেন (যেটিকে ইজতিবা বলা হয়) এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়ই ডান হাত হাজরে আসওয়াদ বরাবর ইশারা করে কাবাকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ করা শুরু করবেন। তাওয়াফের সাতটি চক্করের শুরুতেই এভাবে হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে ডান হাত তুলে ইশারা করবেন (ইশারা করে হাতে চুমু খাওয়া যাবেনা) এবং ইশারা করার সময় বলবেন –

بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবর

অথবা

اَللهُ اَكْبَر

উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবর

যদিও হাজরে আসওয়াদ চুমু খেয়ে বা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করা সুন্নত কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সাধারনভাবে এখন এটা আর সম্ভব হয়না, যদি সম্ভব হয় তবে চুমু খেয়েই তাওয়াফ শুরু করবেন কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে অন্যকে কষ্ট দিয়ে করা যাবেনা। 

একটি তাওয়াফে মোট সাতটি চক্কর দিতে হয় এবং প্রতিটি চক্কর হাজরে আসওয়াদ বরাবর কর্নার থেকে শুরু হয়ে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর কর্নারে এসে শেষ হয়।

পুরুষরা প্রথম তিন চক্কর ছোট ছোট পদক্ষেপে দৌড়ানোর ভান করে হাঁটবেন (যেটিকে রমল বলা হয়) এবং বাকি চারটি চক্কর স্বাভাবিক ভাবে হাঁটবেন, আর মহিলারা ৭টি চক্করই স্বাভাবিক ভাবে হাঁটবেন।

তাওয়াফের প্রতিটি চক্করে হাজরে আসওয়াদের আগের যে কর্নার রয়েছে যেটিকে রুকনে ইয়ামানি কর্নার বলা হয়, এই কর্নার হাত দিয়ে স্পর্শ  করবেন কারণ এই সময় এটি স্পর্শ করা সুন্নত, যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে তাওয়াফ করা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, রুকনে ইয়ামানিকে চুমু খাওয়া যাবেনা।

এভাবে তাওয়াফের সাতটি চক্কর শেষ করে পুরুষদের গায়ের ইহরামের কাপড়টি দিয়ে ডান কাঁধটি আবৃত করে ফেলবেন অর্থাৎ চাদরের মত করে পরবেন।

উল্লেখ্য যে, তাওয়াফের সপ্তম চক্করটি শেষ করার পর হাত দিয়ে ইশারা করা বা হাতে চুমু খাওয়া যাবে না এবং তাওয়াফ করার সময় কখনই হিজরে ইসমাইল বা হাতিম এর ভিতর দিয়ে তাওয়াফ করা যাবেনা, কারণ হিজরে ইসমাইল কাবার একটি অংশ আর কাবার ভিতর তাওয়াফ করা যায়না।

তাওয়াফের দু’আ-

তাওয়াফের সময় যে কোন দু’আ করা যায় । তবে রুকনে ইয়ামানি কর্নার থেকে হাজরে আসওয়াদ কর্নার পর্যন্ত তাওয়াফ করার সময় একটি দু’আ আছে, এই দু’আটি করা সুন্নত। দু’আটি হল – 

رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: রব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরতি হাসানাতাও ওয়া ক্কিনা আ’যাবান্নার।

অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।

তিন: তাওয়াফের নামাজ

তাওয়াফ শেষ করার পর তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব) আদায় করতে হবে। এই নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ কোন সময় নেই, এটি যে কোন সময় আদায় করা যায়। কাবা ও মাকামে ইব্রাহিম কে সামনে রেখে এই নামাজ পড়া উত্তম। কিন্তু যদি ভিড়ের কারণে উক্ত নামাজের যায়গায় নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয় তবে মাসজিদুল হারামের যেকোনো যায়গায় আদায় করলে চলবে। খেয়াল রাখবেন, মহিলারা পরপুরুষদের সাথে দাঁড়িয়ে বা পুরুষরা পরমহিলাদের সাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যাবেনা।

তাওয়াফের এই ওয়াজিব নামাজে সুরা ফাতিহার সাথে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া উত্তম, যদি জানা না থাকে তবে সুরা ফাতিহার সাথে যে কোন সুরা পড়ে নামাজ আদায় করা যাবে।

তাওয়াফের নামাজ আদায় করার পর দাঁড়িয়ে বিসমিল্লাহ্‌ বলে জমজমের পানি পান করবেন, এই সময় জমজমের পানি পান করা সুন্নত এবং পান করা শেষে বরকতের জন্য একটু পানি হাতে নিয়ে মাথায়, মুখে এবং গায়ে মাখতে পারেন। মাতাফের পাশেই জমজমের পানি পানের ব্যবস্থা আছে।

চার: সায়ী

সায়ী করার জন্য প্রথমে সাফা পাহাড়ে যেতে হয়, সাফা পাহাড়ে উঠার সময় একটি দু’আ আছে, দু’আটি হল –

إِنَّالصَّفَاوَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِاللهِ

উচ্চারণ: ইন্নাস সফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআ’ইরিল্লাহ।

অর্থ: নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমুহের অন্তর্ভুক্ত।

সাফা পাহাড়ে পৌঁছানোর পর কাবার দিকে মুখ করে মুনাজাতের ন্যায় দুই হাত তুলে নিচের দু’আটি পড়বেন, যে দু’আটি আমাদের নবী করিম (সাঃ) করেছিলেন, দু’আটি শুরু করার আগে তিনবার “আল্লাহু আকবর” বলবেন এবং এরপর বলবেন –

لَا اِلَهَ اِلَّااللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرُ،لَا اِلَهَ اِلَّااللهُ وَحْدَهُ اَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَامَ الْاَحْزَابَ وَحْدَهُ ـ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং ক্বদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়া’দাহু ওয়া নাসর আবদাহু ওহাঝামাল আহঝাবা ওয়াহদাহু।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, সকল রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁর জন্য; তিনি সমস্ত বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা’বূদ নেই। যিনি স্বীয় ওয়াদা পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন।

এই দু’আটি করার পর নিজের পছন্দমত দু’আ পড়বেন।

এভাবে আবারো দ্বিতীয় বারের জন্য আরবিতে আগের দু’আটি পড়বেন এবং এরপর নিজের পছন্দমত দু’আ করবেন। দ্বিতীয়বার দু’আটি শুরু করার আগে এখন আর “আল্লাহু আকবর” বলতে হবেনা।

আবারো তৃতীয় বারের জন্য আরবিতে আগের দু’আটি পড়বেন এবং নিজের পছন্দমত দু’আ করবেন। এবারও দু’আটি শুরু করার আগে এখন আর “আল্লাহু আকবর” বলতে হবেনা।

উল্লেখ্য যে, এই দু’আটির কিছু অংশ পড়লেও দোষের কিছু নেই, তবে যেহেতু এটি দু’আ কবুলের জায়গা তাই এখানে নিজের মত বেশি বেশি দু’আ করবেন।

দু’আ শেষ করে সায়ী করতে হবে অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাত চক্কর দিতে হবে।

সাফা পাহাড়ের দু’আ শেষ করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা শুরু করবেন, একটু হাঁটার পরেই দেখবেন কিছুটা জায়গা সবুজ লাইট দিয়ে চিহ্নিত করা আছে, এই সবুজ চিহ্নিত জায়গাটিতে পুরুষদের একটু দ্রুত দৌড়ানোর ভান করে হাঁটতে হবে কিন্তু মহিলারা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। সবুজ চিহ্নিত জায়গাটি শেষ হলে আবারো স্বাভাবিক ভেবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে যাবেন। এভাবে সায়ী’র প্রথম চক্কর শেষ হবে। সায়ি করার সময় নির্দিষ্ট কোন দু’আ নেই, এইসময় নিজের পছন্দমত যে কোন দু’আ করা যায়।

মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছানোর পর কাবার দিকে মুখ করে মুনাজাতের ন্যায় দুই হাত তুলে সাফা পাহাড়ের ন্যায় তিনবার দু’আটি পড়বেন।

দু’আ করা শেষ হলে আবারো মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ের দিকে হাঁটা শুরু করবেন, আগের ন্যায় সবুজ চিহ্নিত জায়গাটিতে পুরুষরা একটু জোরে হাঁটবেন এবং সবুজ চিহ্নিত জায়গাটি শেষ হলে স্বাভাবিক ভেবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে যাবেন। এভাবে সায়ী’র দ্বিতীয় চক্কর শেষ হবে।

একইভাবে মোট সাতবার চক্কর দিতে হবে এবং মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে সায়ী’র সপ্তম চক্করটি শেষ হবে।

উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র সাফা পাহাড়ে প্রথমবার এবং মারওয়া পাহাড়ে প্রথমবার দাঁড়িয়ে দু’আ করতে হয়, কিন্তু শেষের পাঁচটি চক্করে সাফা বা মারওয়া পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দু’আ করতে হবেনা। তবে সায়ী করার সময় নিজের পছন্দ মত দু’আ করবেন।

পাঁচ: মাথা মুণ্ডন

সায়ী পূর্ণ করে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করবেন বা মাথার চারদিকের চুল সমান পরিমাণে ছেঁটে নিবেন, তবে মাথা মুণ্ডন করা বা কামানো উত্তম। মনে রাখবেন, চুল ছোট করার ক্ষেত্রে মাথার যে কোন স্থান থেকে একটু করে কাটলে চলবে না বরং মাথার চতুর্পাশ দিয়ে সমান পরিমান কাটতে হবে। মহিলারা সবগুলো চুল একত্র করে নিজে বা মাহারাম পুরুষ দিয়ে চুলের অগ্রভাগের এক ইঞ্চি পরিমান কেটে নিবেন।

এভাবে উমরাহ্‌ পূর্ণ হয়ে যাবে ইং-শা-আল্লাহ্‌ এবং ইহরাম কালের নিষিদ্ধ কাজগুলো এখন হালাল হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Discover more from All Info World

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading